kripan
কৃপণ (পুনরানুবাদ )
অভিযান ভট্টাচার্য
______________________________________________________________________
[প্রাক-কথন : আজ থেকে অনেক বছর আগেকার কথা | তখন উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে গেছি | ইংরাজি পাঠ্যসূচীতে রবীন্দ্রনাথের 'কৃপণ' কবিতার একটি ইংরাজি অনুবাদ ছিল | অনুবাদক বোধ হয় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ | মূল বাংলা কবিতাটি আমি তখন পড়িনি | হঠাত খেয়াল হলো, আচ্ছা যদি ধরে নি রবিঠাকুর আসলে ওই ইংরাজি পদ্যটাই লিখেছেন, কোনো বাংলা পদ্য থেকে তর্জমা করে ওই পদ্যটার জন্ম হয়নি, তাহলে? চেষ্টা করে দেখিনা এটাকে বাংলা করলে কি দাঁড়ায় | অতএব নেমে গেলাম অনুবাদকের ভূমিকায় | করে ফেল্লাম কৃপণের ইংরাজি অনুবাদের 'বিপরীত অনুবাদ' | কোনো প্রযুক্তিবিদ হয়ত বলবেন এ এক 'literary reverse engineering' | আমি বলি নিছক পাগলামি |
আরেকটা কথা | একটি ওমর খৈয়ামের ফার্সি কবিতার বাংলা অনুবাদ গ্রন্থের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ কবিতাকে অন্তঃপুরচারিনী নারীর সাথে তুলনা করেছিলেন | এক ভাষার অন্তঃপুর থেকে কবিতাকে অন্য ভাষায় স্থানান্তরিত করলে অন্তঃপুরচারিনীর মতই কবিতার ভাব ও ভাষা যেন অবগুন্ঠনবতী হয়ে থাকে; কিছুতেই তার আড় ভাঙ্গে না | তাই রবিঠাকুরের অন্তঃপুরচারিনীকে স্বগৃহে এনে অবগুন্ঠন উন্মোচনের দুঃসাহস আমার নেই | আমার নিজের শব্দ দিয়ে গড়া কুটির প্রাঙ্গনের গোষ্পদের জলে যদি অন্তঃপুরচারিনীর কিছু ছায়া এসে পড়ে, তাতেই আমার পরম প্রাপ্তি | ]
ভিক্ষা মাগি দোরে দোরে
ফিরিতেছিনু গ্রামের পথে,
হেনকালে ওই অদূরে
দেখিনু তব স্বর্ণ রথে |
উজ্জ্বল সুখ স্বপ্ন সম
বিস্ময়ে মাতি আজ
দৃষ্টি পথে এলে ওগো মম
রাজার অধিরাজ !
আশায় আশায় জাগিল প্রাণ
দাঁড়ায়ে রহিনু সেথা,
ভাবিনু বুঝি হ'ল অবসান
দীন যত দিন হেথা |
ভাবিনু মাগিব কিছুনা মুখে
তোমার কাছেতে আজি ;
বরষিবে তুমি জাগায়ে সুখে
ধুলায় রত্নরাজি |
যেথায় দাঁড়ায়ে ছিলাম আমি
সেথায় থামায়ে রথে,
স্মিত হাসিয়া আসিলে নামি
আমায় দেখিয়া পথে |
সবে ভাবি মনে, বুঝি বা এবার
ভাগ্য আসিল শেষে,
সহসা কহিলে, 'কি আছে দেবার?'
হস্ত প্রসারি হেসে |
ওগো রাজা, একি কৌতুক হায়
করিলে গো মহামতি!
ভিখারীর কাছে রাজা আজি চায়
ভিক্ষা হস্ত পাতি!
বিহ্বল আমি দিশা নাহি পাই |
একটি কনা ধীরে
ঝুলি হতে আমি তুলে দিয়া যাই
ক্ষুদ্র কনাটিরে |
দিন শেষে যবে মোর ঝুলি খানি
উপুড় করিনু সাঁঝে
দেখি সেথা একি, এক 'সোনা-কনা'
আর সব কনা মাঝে !
বিহ্বল আমি কাঁদি বারে বার,
হায়রে হিয়া কৃপণ ;
সঁপিতে সবই তোমায় আমার
চাহে নাই কেন মন!
___________________________
রাজার অধিরাজ !
আশায় আশায় জাগিল প্রাণ
দাঁড়ায়ে রহিনু সেথা,
ভাবিনু বুঝি হ'ল অবসান
দীন যত দিন হেথা |
ভাবিনু মাগিব কিছুনা মুখে
তোমার কাছেতে আজি ;
বরষিবে তুমি জাগায়ে সুখে
ধুলায় রত্নরাজি |
যেথায় দাঁড়ায়ে ছিলাম আমি
সেথায় থামায়ে রথে,
স্মিত হাসিয়া আসিলে নামি
আমায় দেখিয়া পথে |
সবে ভাবি মনে, বুঝি বা এবার
ভাগ্য আসিল শেষে,
সহসা কহিলে, 'কি আছে দেবার?'
হস্ত প্রসারি হেসে |
ওগো রাজা, একি কৌতুক হায়
করিলে গো মহামতি!
ভিখারীর কাছে রাজা আজি চায়
ভিক্ষা হস্ত পাতি!
বিহ্বল আমি দিশা নাহি পাই |
একটি কনা ধীরে
ঝুলি হতে আমি তুলে দিয়া যাই
ক্ষুদ্র কনাটিরে |
দিন শেষে যবে মোর ঝুলি খানি
উপুড় করিনু সাঁঝে
দেখি সেথা একি, এক 'সোনা-কনা'
আর সব কনা মাঝে !
বিহ্বল আমি কাঁদি বারে বার,
হায়রে হিয়া কৃপণ ;
সঁপিতে সবই তোমায় আমার
চাহে নাই কেন মন!
___________________________
0টি মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
এতে সদস্যতা মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন [Atom]
<< হোম